ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুমিল্লা ঘুরে খাওয়াদাওয়া

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

ডায়না হোটেলের হালিম, মাঈনুদ্দিন বেকারির পেটিস। কুমিল্লায় একসময় এই ছিল বিকেলের বিশেষ খাওয়াদাওয়া। শওকত লিয়াকত হোটেলের পরোটা-ভাজি আশি থেকে নব্বইয়ের দশকের কিশোর-তরুণদের জিভে এখনো স্মৃতির স্বাদ জাগায়। মাতৃ ভান্ডারের রসমালাই তো যুগ যুগ ধরেই কুমিল্লার ঐতিহ্য। শহরের মনোহরপুরেই যার একমাত্র ঠিকানা। বাকি সব ছদ্মবেশী ‘মাতৃ ভান্ডার’।

তবে সময়ের দাবি থেকে পিছিয়ে থাকেনি কুমিল্লার মানুষের রুচি আর খাবারের মেন্যু। পিংকিং চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ছুরি-কাঁটাচামচের টুংটাং মূর্ছনা নিয়ে আসে নিস্তরঙ্গ মফস্বল শহরে। কুকিজার, ইয়াম ইয়ামের বার্গার আর ধোঁয়া-ওঠা কফি একটা সময়ে দখল করে নিয়েছিল তরুণদের বৈকালিক আড্ডা। এরপর এল ‘হাইওয়ে’ খাবারের যুগ। শহর লাগোয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাইওয়ে ইন, জোড় কানন আর নূরজাহানের মতো হোটেলগুলো কুমিল্লার মানুষকে লং ড্রাইভ শেখাল। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে সরে একটু হাঁফ ছেড়ে আড্ডা আর খাবারের আনন্দ দিল।

সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরের বাংলা রেস্তোরাঁ কুমিল্লার খাবার আর খাবারের পরিবেশে নতুন মাত্রা আনে। রুচিশীল পরিবেশে দেশীয় খাবারের উপস্থাপন তরুণ প্রজন্মকে টানতে শুরু করে বাংলা রেস্তোরাঁর দিকে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা বলতে গিয়ে আসিফ টেনে আনলেন সেই ডায়নার হালিম, মাঈনুদ্দিন বেকারির হট পেটিসের স্মৃতি—‘কুমিল্লায় এখন অনেক রকম খাবারের ছড়াছড়ি। তবে আমি এখনো ডায়নার হালিম আর মাঈনুদ্দিন বেকারির পেটিসের ফ্যান।’

কুমিল্লায় এখন ‘স্পেশাল ট্রিটে’ একটু সি-ফুড, একটা সারলন স্টেক; নিদেনপক্ষে চিকেন তন্দুরি নয়তো দোসা-ছোলা বাটোরা তো লাগেই। আর শুধু খেলেই তো হবে না, বাচ্চাদের জন্য খেলার একটু জায়গা চাই। নগরের কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে সে ব্যবস্থাও আছে।

সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে কুমিল্লার মানুষের রুচি। নতুনত্ব আসছে খাবারের মেন্যুতে। তারুণ্যের চোখে ভাসছে নতুন স্বপ্ন। গত দেড়-দুই বছরে কুমিল্লার খাবারদাবারে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। সেলফি আর চেক-ইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে আধুনিক সব খাবার আর রেস্তোরাঁর পরিচিতি। কুমিল্লার খাবারদাবার নিয়ে ফেসবুকে আলাদা একটা পেজই আছে-ফুডিজ গসিপ কুমিল্লা। এই পেজে ঢুকলে প্রতি ক্লিকেই সামনে চলে আসবে অসংখ্য বাহারি খাবার আর রেস্টুরেন্ট। কোথায় কোন বিশেষ খাবারটা পাওয়া যায়, কোথায় খাবারের মানের তুলনায় দাম একটু বেশি-সব খবরই আছে ফুডিজ গসিপ কুমিল্লায়। এ ছাড়া প্রায় সব রেস্তোরাঁর আছে আলাদা ফেসবুক পেজ।

কুমিল্লার খাবারে নতুনত্বের স্বাদ যাঁরা এনেছেন, তাঁদের একজন কামাল আহমেদ। নগরের মানুষকে সি-ফুড আর বিফ স্টেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাঁর কফি বাজ ফিউশন ক্যাফে। শহরের পুলিশ লাইনে কফি বাজ ফিউশন ক্যাফে খোলার আগে পুলিশ সুপার মার্কেটে তিনি খোলেন কফি বাজ ক্যাফে। ম্যাক্সিকান খাবার আর কফির স্বাদের ভিন্নতা প্রথম দিন থেকেই তরুণ-তরুণীদের ভিড় জমিয়ে তোলে সেখানে।

দুটি ক্যাফের অন্দরসজ্জায়ও আছে বিশেষত্ব। কফি বাজ ফিউশন ক্যাফে সাজানো হয়েছে সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি দিয়ে। কফি বাজ ক্যাফেতে গেলে এক ঝলকেই দেখে নেওয়া যায় কুমিল্লার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ছবি।

কুমিল্লা জিলা স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে অনেকটা খোলা আকাশের নিচে বধূয়া ফুড ভিলেজ। গাছগাছালি আর লোকজ আবহে সাজানো এই রেস্তোরাঁয় ঢুকলেই মন ভালো করে দেওয়া অনুভূতি হয়। খাবারের দাম খুব বেশি নয়, তবে স্বাদ অতুলনীয়। দুই ভাই ফাহিম আহমেদ আর ফুয়াদ আহমেদের এই রেস্তোরাঁর মেন্যুতে আছে বাংলা, চায়নিজ আর ভারতীয় খাবার। হায়দরাবাদি বিরিয়ানির স্বাদ নিতে পারেন এখানে বসেই। অবশ্য সন্ধ্যার দিকে যখন ধোঁয়া উড়িয়ে কাবাব পোড়া সুবাস ছড়াতে থাকে, তখন অন্য কিছু খেতে মন চাইবে না। ও হ্যাঁ, বধূয়া ফুড ভিলেজের চটপটিও এখন নগরের জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় ঢুকে গেছে।

রেড রুফ ইন, ক্যাপসিক্যাম, কাশ্মীরি, ইউরো কিং, এবি ফুড, আইসি স্পাইসি, শর্মা হাউস, বরফি, স্টার ক্যাফে, মিঠাই, আলিফ চায়না গার্ডেন, ইয়াম ইয়াম—মানুষের বদলে যাওয়া রসনার স্বাদ মেটাতে এ রকম অসংখ্য বাহারি নামের রেস্তোরাঁ নগরজুড়ে। সবারই আছে আলাদা বিশেষত্ব। কোথাও ঝাল, কোথাও মিষ্টি, কোথাও বা বুক ঠান্ডা করা জুস-পানীয়-আইসক্রিম। ঢাকা থেকে অল্প দূরের এই শহরে বেড়াতে এলে ‘কোথায় খাব’ প্রশ্নটা অবান্তর। কুমিল্লায় আর যা-ই হোক, এখন ভালো খাবারের অভাব নেই। শুধু একটু রুটিন করে নিতে হবে কোন বেলা কোথায় খাবেন।

তা কুমিল্লায় হঠাৎ খাবারের এত রমরমা ভাব কেন? মানুষের মুখে অচেনা স্বাদ তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জটাই-বা কেন নিলেন তরুণ উদ্যোক্তারা? প্রশ্নটার উত্তর দিতে গিয়ে আসিফ আকবর আবারও চলে যান ফ্ল্যাশব্যাকে, ‘ডায়না হোটেলের মালিক লিয়াকত আলী দুলাল ভাইকে আমি বলব কুমিল্লার ফুড বিজনেসের মুঘল। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে মানসম্মত খাবার দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। শহরের বিখ্যাত ডায়না হোটেল, একসময়ের পিংকিং, ইমানিয়া বেকারি, আবদুল্লাহ সুইটস-সব তাঁর হাতে গড়া। তাঁর কাছ থেকেই আমরা, আমাদের পরের প্রজন্ম উৎসাহ পেয়েছি।’

শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন অনেকটাই নিভৃতে চলে গেছেন লিয়াকত আলী দুলাল। তবে ভালো খাবারের গন্ধটা তিনি ঠিকই ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন তারুণ্যের মাঝে। হালিম-পেটিসের শহর কুমিল্লা এখন আধুনিক খাবারের নগর।