ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারেক রহমানের যে কাজগুলো দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর ছিল

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

১৯৭৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ইচ্ছাতেই তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে জনসম্মুখে আসেনি। তবে ১৯৮১ সালের আরেক সামরিক অভুত্থ্যানে জিয়াউর রহমান প্রয়াণে নেতৃত্ব শূন্য হয় বিএনপি। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপরও বেগম জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল তারেক রহমান। অবশেষে ২০০১ সালে রাজনীতির ময়দানে আসে জিয়া পুত্র তারেক।

২০০১ এর নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে বিশেষ করে বিএনপিতে তারেকের মতো তরুণ নেতৃত্ব দেশবাসী ও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্বাগত জানান। কিন্তু দুর্নীতিতে জর্জরিত তারেক রহমান তার প্রতি জনগণের এমন আস্থাকে ভুল প্রমাণ করতেও খুব বেশি সময় নেয়নি।
রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকেই বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার থেকে শুরু করে কর্মপন্থাসহ সব কিছুই হতে থাকে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। সেই নির্বাচনে জয় পায় বিএনপি। এরপর থেকেই শুরু হয় দেশজুড়ে তরুণ তারেকের অবৈধ আধিপত্য। বিএনপি দল ও সরকারের ওপর তারেক ও তার সঙ্গী-সাথীদের আধিপত্য, ক্ষমতার ব্যবহার-অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলতেও মুষড়ে যেতেন অনেকে।

নিজের দুর্নীতির শিকড় দেশবিশ্বব্যপী ছড়ানোর লক্ষ্যে তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য আলী আজগর লবির মাধ্যমে গুলশানে ‘হাওয়া ভবন’ নামে একটি দোতলা বাড়ি ভাড়া নেয় তারেক। ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে বসতেন তারেক। আর সেখান থেকেই একে একে পরিচালনা করতে থাকে অর্থ লুণ্ঠণ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম। খালেদা জিয়া সরকারের প্রধান হলেও বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়ে যায় তারেকের হাওয়া ভবন। সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আসতে থাকে তার কাছ থেকেই।

ওইসময়ের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে ১৯৭১ সালের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গড়া দল জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য জোট সাথে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল পর্যায়ে ঝটিকা সফর শুরু করেন তারেক। জোট গঠনে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে থাকে সে। এরইমাঝে ঘড়ি চোরাচালানের জন্য ‘ক্যাসিও বাবর’ নামে সুপরিচিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তারেকের। তারেকের অনুগত প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে হাওয়া ভবনে।

এদিকে সে সময়ে দেশের ইসলামী জঙ্গিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর বিএনপির নেতা ও দীর্ঘদিনের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুন, রুহুল কুদ্দুস দুলু, নাদিম মোস্তফা, আমিনুল হক ও আলমগীর কবিরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে কাছে টানে তারেক রহমান। আর এতেই অনেকটা বিনা পরিশ্রমেই দেশের বৃহত্তম ও বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর মতো একটি গ্যাং পেয়ে যায় তারেক।

এক সময়ের ‘হাওয়া ভবন’ বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটি ভেঙে বর্তমানে ‘অ্যজোরা’ নাম দেয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলা মামলার রায়েও হাওয়া ভবনের বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, এই ভবনেই হয়েছে হামলার ছক। এখানে বসেই হয়েছে প্রথম পরিকল্পনা যে, শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে হবে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে। এ বিষয়ে আদালতে দেয়া জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের বয়ানে এসেছে সেই বৈঠকের কথা। জানান হামলার তিন দিন আগে হাওয়া ভবনে তারেক রহমান, সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবার, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি ও বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় গ্রেনেড হামলা চালানোর।
অপরদিকে তারেক রহমানে সম্পদ লালসা মেটাতে গিয়াসউদ্দিন মামুনও উঠেপড়ে কাজে নামে। সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো কাজ বা মোটা অংকের ঘুষ কিভাবে আদায় করতে হয় সেটিও ভালোভাই জানতে গিয়াস।

এদিকে তারেকের এমন মাত্রা ছাড়ানো দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে সেসময় খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ২০০৫ সালের ১৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের সঙ্গে আলাপে বলেছিলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত তারেক রহমানকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে চলেছেন। আর আলাপের এ বিষয়টি ২০১১ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন গোপন নথিপত্রে উঠে এসেছিল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আরেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ারটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে পাঠানো এক বার্তায় উল্লেখ করেন যে, দুর্নীতিগ্রস্ত ও উগ্র এমন এক সরকার যে তার নিজের দেশের জনগণ ও সম্পদ লুণ্ঠন করে- তার প্রতিনিধিত্ব করেন তারেক। ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট উইকিলিকস রাষ্ট্রদূতের পাঠানো এই বার্তাটি ফাঁস করে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কাজ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তারেক ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও ফাঁস হওয়া ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়।
অবশেষে ক্ষমতার পালা বদলে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন, ঘুষে আদায় ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো একে একে কোঁচোর গর্ত থেকে বেরোতে থাকে। এরপর বিভিন্ন সময়ে তারেকের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের হয়। যার মধ্যে কিছু মামলার বিচার এখনও চলছে।
এদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বন্ধু গিয়াসউদ্দিন মামুনকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করতে সহায়তা করার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ২০১৬ সালে একটি মামলায় তারেকের সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করার রায় দেয় আদালত।
অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় তারেককে। একই মালায় তার ‘মা’ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকেও ১০ বছরের বিনাশ্রম সাজা দেয়া হয়। বেগম জিয়া বর্তমানে কারাগারে এই মামলায় রায়ের সাজা ভোগ করছেন, তবে গত প্রায় এক যুগ ধরে দেশের বাইরে পালাতক রয়েছে তারেক।