পোল্ট্রি খামারে বেকারত্ব দূর

পরিবারে আট ভাই-বোনের জীবন ধারণ, লেখাপড়া ছিল কঠিন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলেও অর্থের অভাবে বিএ পরিক্ষা দেয়া হয়নি। উঠতি বয়সে অভাবের কষাঘাত হাড়ে হাড়ে টের পান ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউপির ভাড়ইমারী সরদার পাড়ার এস এম রবিউল ইসলাম। বেকারত্বের অভিশাপ তাকে গ্রাস করে। তবে হাল ছেড়ে দেননি তিনি। বেকারত্ব ঘুচাতে বাড়ির পাশেই শুরু করেন পোল্ট্রি খামার।

খামারে সফল হয়ে নকিম উদ্দিন সরদারের তৃতীয় ছেলে এখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক। বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে দিন বদল হয়েছে তার। সংসারে অর্থের যোগান দেন রবিউল। এখন সে এলাকার অন্যান্য বেকার যুবকদেরও পোল্ট্রি খামারে উদ্বুদ্ধ করছে।

রবিউল জানান, কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রবিউল, অর্থের সংকট থাকায় যুব উন্নয়নে পোল্ট্রি, গবাদী পশু ও মাছের উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে নিজ বাড়িতেই ২০০০ সালে লেয়ার জাতের ২৫০টি মুরগী পালন শুরু করেন। সেই থেকে আর থেমে থাকেননি রবিউল। মুরগী পালন করে সারা বছর পারিবারিক ডিম ও মুরগীর চাহিদা মিটানোর পর ডিম ও মুরগী বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয়ও করতে থাকেন। এরপর থেকে তিনি তার খামারকে প্রসারিত করতে থাকেন। বর্তমানে তার খামারে ২১ হাজার মুরগী রয়েছে। এরমধ্যে ৮ হাজার সোনালী ও দুই হাজার ব্রয়লার। প্রতিদিন তিনি ১০হাজার ডিম বিক্রি করেন।

রবিউল জানান, বর্তমানে খামারে ১৪ জন নিয়মিত শ্রমিক রয়েছে। ডিম বিক্রির মুনাফা দিয়ে চার বিঘা জমি ক্রয় করেছি। নকিম উদ্দিন সরদার পোল্ট্রি খামারের স্বত্ত¡াধিকারী রবিউল আরও বলেন, এলাকার বেকার যুবকদের নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ চালু করেছি।

তিনি বলেন, মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব একটি বড় মাপের বায়োগ্যাস প্লান্ট করেছি। এতে নিজের পরিবারের রান্নার কাজ শেষ করে অন্য নয়টি পরিবারে সাপ্লাই দিতে পেরেছি। কিছুটা হলেও রান্নার কাজে দেশের গাছ, কাঠ বেঁচে যাচ্ছে।

রবিউল জানান, আমার আর্থিক অবস্থা এবং পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক বেকার ছেলে পোল্ট্রি ও গবাদী পশুর খামার করে তারাও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। রবিউল বলেন, সহজ শর্তে কোন ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে আগামীতে একটি হ্যাচারী ও বড় মাপের গবাদী পশুর খামার স্থাপন এবং খামারটি আরও বেশি প্রসারিত করতে চাই। একই সঙ্গে এলাকার বেকার ছেলেদের আত্ম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আছে।

তিনি আরও বলেন, চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এতে বেকারত্ব ঘুচবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করতে আহ্বান  জানান।

ঈশ্বরদী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা জামান বলেন, রবিউল ইসলাম পোল্ট্রি খামার করে এখন ঈশ্বরদীর একজন মডেল খামারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বেকারত্বের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে পোল্ট্রি খামার করে আজ তিনি উপজেলার মধ্যে একজন বড় ও সফল পোল্ট্রি খামারী। রবিউল পোল্ট্রি খামার করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন। রবিউল পোল্ট্রি খামার করে কিছুটা হলেও দেশের মুরগী ও ডিমের চাহিদা পূরণ করছেন। সেই সঙ্গে পুষ্টির যোগানও দিচ্ছেন। রবিউল সঠিক পদ্ধতিতে পোল্ট্রি খামার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রবিউলের দেখে এলাকার যুবকদের মধ্যে পোল্ট্রি খামারের প্রতিযোগিতা চলে এসেছে। রবিউল পোল্ট্রি খামারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারলে আগামীতে ভালো করবে বলে আশা করছি।