ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশে মি-টু নিয়ে সবাইকে মুখ খোলার আহ্বান

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

যৌন নিপীড়নের শিকার এবং যৌন নিপীড়কদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশের সবাইকে মুখ খোলার আহ্বান জানিয়েছেন নারী নেত্রী ও সাংবাদিক নেতারা।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানবন্ধন থেকে তারা এই আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে ‘নিজেরা করি’ এর সমন্বয়কারী ও নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন, ‘যে সকল নারী হ্যাশট্যাগ মি-টু আন্দোলনের অংশ হিসেবে যৌন নিপীড়কদের চরিত্র উন্মোচিত করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের এই সমাজে আমরা একজন রিকশা ওয়ালাকে উপযুক্ত সম্মান দেই না, তাকে তুমি বলে সম্বোধন করি। গৃহকর্মীকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি। একইভাবে পুরুষেরাও নারীকে মানুষ মনে করে না। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলগুলোতেও নারীদের তাচ্ছিল্য করা হয়। সময় এসেছে এখন এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার। পুরুষদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করেন, আপনাদের আমরা সমাজ গঠনের সহযোদ্ধা হিসেবে দেখতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর তারা বলেছেন- তাদের স্ত্রীরা ঘরে কান্নাকাটি করে, অশান্তি হয়। আমি বলতে চাই, যখন আপনারা আরেক নারীর গায়ে হাত দিয়েছেন তখন স্ত্রীর কথা চিন্তা করেন নাই কেন? বাংলাদেশের নারীদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই- আপনারা সকলেই মুখ খুলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। নিপীড়ক আর্থিক কিংবা সামাজিক দিক থেকে যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

me-too

মানবন্ধনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, ‘আমরা যৌন নিপীড়কদের রুখে দিতে চাই, সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে চাই। সকলে এসব নিপীড়কদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান যাতে কেউ নারীকে কুদৃষ্টিতে দেখতে না পারে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা পুরুষদের পক্ষ থেকে এই মানবন্ধনে সংহতি জানাতে এসেছি। আমি আমার সহকর্মীদের জন্য পরিষ্কার করে দিতে চাই, এই আন্দোলন কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, এটি নিপীড়কদের বিরুদ্ধে। যেকোনো সম্পর্ক যৌথ সম্মতিতে হলে কোনো সমস্যা নেই, তবে যদি কেউ বল প্রয়োগ বা প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক সম্পর্ক করতে চায় তাহলে সেটির বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো। আমাদের উচিত যারা মি-টু (যৌন নিপীড়ন) নিয়ে নিজেদের কথা বলেছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত না করে নিপীড়কদের কালো তালিকা তৈরি করা।’

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের আয়োজনে মানববন্ধনে অংশ নেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

মানববন্ধনের মূল ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা #মি’টু আন্দোলনের পক্ষে, আমরা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে’, ‘নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ান, নিপীড়ককে ঘৃণা করুন’।

me-too

মানববন্ধনে অংশ নেন যৌন নিপীড়নের শিকারের ৩১ বছর পর মি-টু আন্দোলনে অংশ নেয়া মুশফিকা লাইজু। তিনি বলেন, আমি আমার ঘটনাটি ৩১ বছর পর সবার সামনে এনেছি। আমি গত ১৪ তারিখ পোস্টটি লিখি, কিন্তু এরপর থেকেই আমার ওপর নানাভাবে আঘাত-প্রত্যাঘাত হচ্ছে। আমাকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য আমার কয়েকজন নারী বন্ধু আমাকে ফেসবুকে ‘ধর্ষণ’ করে ফেলেছেন, অথচ তারাও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই- আপনারা আমার জন্য নয় আপনার কন্যাদের জন্য একটি ভালো পৃথিবী তৈরি করুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, এই ব্যানারের পেছনে নারীরা দাঁড়িয়েছেন। তবে পুরুষরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হন। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষরাও পুরুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদেরও উচিত মি-টু আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও নিপীড়কদের তুলে ধরা।

নারীদের হিমবাহর সঙ্গে তুলনা করে তিনি আরও বলেন, ‘হিমবাহর একটি ছোট অংশ পানির ওপরে থাকে। ছোট্ট একটি অংশ হাজার হাজার জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে। নারীদের এই আন্দোলনের কারণে আমরা অনেকের রূপ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও দেশে যৌন বিরোধী কোনো আইন করা হয়নি, শুধু হাইকোর্টের একটি আদেশ রয়েছে। নারীদের এই যৌন নিপীড়ন বন্ধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

me-too

নারী সাংবাদিক উদিসা ইসলাম বলেন, মি-টু নিয়ে এ পর্যন্ত নয়জন মুখ খুলেছে, এর মানে এই না যে আর কেউ এর শিকার হয়নি। দীর্ঘদিন পরে তাদের মুখ খোলার কারণ আগে মুখ খোলার কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এখন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। আমি আমার পুরুষ সহকর্মীদের বলবো- আপনারা আমাদের এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ান।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মাইনুল আলম বলেন, এ ধরনের আন্দোলন পুরুষ সমাজকে জাগ্রহ করবে। আমরা এই আন্দোলনকে স্বাগত জানাই।

নারী সাংবাদিক ফারহানা মিলি বলেন, এখনও সময় আছে যারা যৌন নিপীড়ন করেছেন তারা নিজেরাই নিজেদের ভুল শিকার করুন। সবার সামনে বলুন যে, আপনারা যা করেছেন আপনার ছেলে যেন এরকম না করে সেই শিক্ষা দিচ্ছেন।

রোববার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যপী এই মানবন্ধন চলে।