কাঁকড়ি-ডাকাতিয়ায় মাটি কাটার ধুম

প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ধ্বংসের পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ‘কাঁকড়ি নদী’।

কাঁকড়ি ও পাশ্ববর্তী মরা ডাকাতিয়া নদী রক্ষা বাঁধসহ অন্তত দশটি পয়েন্ট থেকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাটি কেটে নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে মাটি লুটে নিয়ে এই নদীর অপরুপ সৌন্দর্য বাঁধাহীনভাবে ধ্বংস করছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উজিরপুর, কালিকাপুর, শ্রীপুর ও কাশিনগরের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়ি নদীর চর এলাকা থেকে প্রভাবশালী চক্রটি দিনের বেলায় অবাধে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। পাশাপাশি নদী রক্ষা বাঁধের মাটি কেটেও বিক্রি করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে চৌদ্দগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কাঁকড়ি নদীটি উপজেলার কাশিনগর এলাকায় এসে পুরাতন ডাকাতিয়া ও নতুন ডাকাতিয়া নদী নাম ধারণ করে একটি শাখা ছোট ফেনী নদীর সঙ্গে ও অপর একটি শাখা বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশে গেছে।

এ বছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই চৌদ্দগ্রাম অংশে ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদী রক্ষা বাঁধ এবং চরের কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে ট্রাক-ট্রাক্টরযোগে ইটভাঁটাসহ বিভিন্নস্থনে বিক্রি করছে প্রভাবশালী ১০টি সিন্ডিকেট। এভাবে প্রতিবছরই মাটি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও বর্ষা মৌসুমে প্রতিবারই বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গে নদী রক্ষা বাঁধ, তলিয়ে যায় নদীপাড় ও তৎসংলগ্ন এলাকার মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।

১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত কাশিনগর-সুয়াগাজী সড়কের মাটির যোগান দিতে কাঁকড়ি ও ডাকাতিয়া নদীর চর ও পাড়ের মাটি অবাধে কাটা হয়েছে। এছাড়া নদীর নাঙ্গলকোট ও লাকসাম অংশেও বিভিন্নস্থানে মাটি কাটা অব্যাহত আছে।

কাশিনগর ইউপি সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আবু হানিফ বলেন, আমি প্রায় সময় তাদেরকে মাটি কাটতে নিষেধ করতাম। কিন্তু প্রভাবশালীরা নিষেধ অমান্য করেই মাটি কাটা অব্যাহত রাখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ জগলুল বলেন, ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ি নদীতে চরের ও পাড়ের মাটি যারা কেটে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। মনির হোসেন, আমির হোসেন, রবিউল, আলমগীরসহ মাটি কাটা সিন্ডিকেটের চারজনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী ভুমি কমিশনার দীপন দেবনাথ বলেন, ডিসি আবুল ফজল মীর ও ইউএনও শেখ শহীদুল ইসলামের নির্দেশে কাশিনগর ও আকদিয়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় দুইটি ট্রাক্টর আটক, ২ হাজার ফুট পাইপ, একটি ভেকু ও একটি মেশিনে আগুন, আরেকটি মেশিন পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।