ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুমিল্লায় দুর্ঘটনা: বাসটি কীভাবে ‘দোতলা’ হল?

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪  

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে খাদে পড়ে পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটানো দোতলা বাসটির নির্মাণে ‘মারাত্মক ত্রুটি’ থাকার কথা সামনে এসেছে। পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনায় পড়া বাসটি ‘দোতলা’। অথচ সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে ‘একতলা’র। সেখানে নিচে বসে এবং ওপরে শুয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা দেখা গেছে।
একতলা বাসটি কীভাবে দোতলা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কেউ এর দায় নিতেও রাজি হয়নি।

একই সঙ্গে ‘বসে ও শুয়ে’ যাওয়ার মত কোনো বাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে দাবি করলেও বিআরটিএ ‘স্বীকার’ করেছে যে, রাস্তায় চলাচল করা এ ধরনের বাসের একটি তালিকা তাদের কাছে আছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বসন্তপুর এলাকায় শুক্রবার ভোরে ‘রিল্যাক্স পরিবহনে’র অনুমোদনহীন দোতলা বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে পাঁচজনের প্রাণহানির সঙ্গে আহত হন ১৫ জন।
অনুমোদনহীন বাসটি কীভাবে রাস্তায় নামল– সেই প্রশ্ন রেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, তৈরির সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করায় তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা, কারণ বিআরটিএর অনুমতি ছাড়া সড়কে বাস চালানোর সুযোগ নেই।
কুমিল্লার মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি লোকমান হোসেন ঘটনাস্থল পরির্দশন করার পর বলেছেন, খাদে পড়ে উল্টে যাওয়া বাসটির একতলায় যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা এবং ওপর তলায় শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এটি ‘সাধারণ বাস’ অর্থাৎ সিঙ্গেল ডেকার হিসেবে নিবন্ধিত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ওসি লোকমান জানতে পেরেছেন, চলন্ত বাসটি মহাসড়কের পাশে একটি বাঁশঝাড়ে কাত হয়ে উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার পর পরীক্ষা করে বাসের চাকা ফেটে যাওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে ওসি মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, একতলায় বসা ও দোলতায় শোয়ার ব্যবস্থা সম্বলিত কোনো বাস সড়কে চালানোর অনুমোদন দেয়নি বিআরটিএ।
তাহলে কীভাবে এ বাস রাস্তায় নামল? এ প্রশ্নে সীতাংশু শেখর বলেন, সিঙ্গেল ডেকার বাসকে অনুমোদন ছাড়াই রূপান্তর করে ডাবল ডেকার বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ১২৩টি বাসের একটি তালিকা আছে বিআরটিএর এ কর্মকর্তার কাছে। গত ডিসেম্বরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বাসগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা।
সেই প্রক্রিয়ার কী হল, সে বিষয়ে শুক্রবার তার কাছে জানতে চাইলে সীতাংশু শেখর বলেন, তাদের সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
অথচ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বারবার কর্তৃপক্ষকে বাসগুলো বন্ধের তাগিদ দিচ্ছে।
দেশের বাস মালিকদের প্রধান এই সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলছেন, “এ ধরনের বাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বারবার বলে আসছি, এগুলোর চলাচল বন্ধ করার জন্য।”
একতলায় বসা আর দুই তলায় শোয়ার ব্যবস্থা থাকা বাসের অনুমোদন না থাকলেও এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
“এখন মহাসড়কে তিনশর বেশি এ ধরনের বাস চলছে। মালিক সমিতির চাপাচাপিতে বিআরটিএ তৎপর হলেও এগুলোর চলাচল বন্ধ হয়নি,” বলেন এনায়েত উল্লাহ।
নির্মাণ ত্রুটির কারণেই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দোতলা বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন মালিক সমিতির এ নেতা।
তবে তিনি এও বলেছেন, “আপনি চড়লে দেখবেন এগুলো প্রচ- দোলে। সাধারণ বাসের চেয়ে এদের উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি। এগুলোর চেসিস সিঙ্গেল ডেকার বাস তৈরির জন্য অনুমোদিত। কিন্তু কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক মাপজোক ছাড়াই লোকাল গ্যারেজে দোতলা বাস বানিয়ে ফেলা হচ্ছে।”
দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আরজ হোসেন নামের এক যাত্রী জানালেন, রিল্যাক্স পরিবহনের বাসটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা দেরিতে রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়ে। দেরিতে ছাড়ায় চালক দ্রুত চালাচ্ছিলেন। আর গতি বাড়ালেই বাস ভীষণভাবে দুলছিল।
“দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে একটি রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি দেওয়ার পর বাসচালক বেপরোয়া গতিতে চালাতে শুরু করেন। তখন বাসের দোলাদুলিতে যাত্রীরা চিৎকার করে চালককে ধীরে-সুস্থে চালাতে বলেন।”
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হোটেল থেকে ছেড়ে আসার মিনিট দশেকের মধ্যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান আরজ হোসেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী, দুর্ঘটনার পর কাত হয়ে থাকায় বাস থেকে বের হতে পারছিলেন না যাত্রীরা। কয়েকজন যাত্রী চেষ্টা করে সামনের ও পাশের কাচ ভেঙে বের হওয়ার পথ করলে কেউ কেউ বাইরে আসেন।
হাইওয়ে থানার ওসি লোকমান বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়েও কয়েকজন যাত্রীকে উদ্ধার করে। জরুরি অবস্থায় বের হওয়ার কোনো পথ বাসটিতে ছিল না।
এনায়েত উল্লাহ অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশে কোনো বাসেরই ‘ইমারজেন্সি এক্সিট’ থাকে না।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ স্লিপার বাস মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রধানকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে তার ফোনটি ধরেন ওই সমিতির কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।
কুমিল্লায় দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির ‘দোতলা’ হিসেবে অনুমোদন ছিল কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “শোনেন, বাংলাদেশে কোনো বাসেরই অনুমোদনের কাগজপত্র পুরোপুরি ঠিক পাবেন না। আজকে আমাদের একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হইছে দেখে কত কথা হচ্ছে। অথচ গত ঈদের আগে কয়েকশ অ্যাক্সিডেন্ট হইছে।” বাসের আকৃতির কারণে দুর্ঘটনায় পড়ার বিষয়টি মানতে রাজি নন ওই ব্যক্তি। পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের স্লিপার বাসের এটা দ্বিতীয় অ্যাক্সিডেন্ট। আগে রংপুরের দিকে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের একটা গাড়ি উল্টাইছিল। এখন আপনি কীভাবে বলবেন যে বাসের বডির কারণেই এটা হয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট হয় ড্রাইভারের কারণে বা রাস্তায় নানা কারণে। আমরা সেগুলো কমানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি।”
বুয়েটের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক মনে করেন, সংখ্যায় অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিআরটিএ হয়ত এসব বাসেরও বৈধতা দিতে বাধ্য হবে, যেভাবে এই দেশে বৈধ হয়েছে ‘কভার্ডভ্যান’ নামের মালবাহী বাহনগুলো।
গত ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, “আমি জানি না, এটা (দোতলা) ওরা কোন চেসিসের ওপর তৈরি করছে। যদি সিঙ্গেল ডেকার বাসের চেসিস এনে তারা সেটাতে ডাবল ডেকার বানায়, তবে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, “যারা অথরিটি, তারা কুম্ভকর্ণ। তারা জানে না তাদের দায়িত্বটা কী। এদের ম্যানপাওয়ার, নলেজ কোনোটাই নেই।”