ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খাবারে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার উপকারিতা

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

খাবার গ্রহণের আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। যদিও এটি একটি সাধারণ বিষয় মনে হয়, কিন্তু একটু চিন্তা করলে বুঝা যায়, এটা গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত। এর উসিলায় খাদ্যগ্রহণও ‘ইবাদত’ ও সওয়াব লাভের মাধ্যমে পরিণত হয়।

উপরন্তু ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ দ্বারা মারেফাতের এক বিশাল দ্বারও উন্মোচিত হয়। কেননা বিসমিল্লাহ উচ্চারণকারী প্রকারান্তরে এ কথা স্বীকার করে যে, আমার সম্মুখে যে খাবার এসেছে, তা আমার ক্ষমতা বা যোগ্যতার বিনিময়ে আসেনি। বরং এটা আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন। আমার এ সাধ্য ছিল না যে, আমি খাবার প্রস্তুত করব। এর দ্বারা প্রয়োজন মেটাব এবং ক্ষুধা নিবারণ করব। বরং এসবই আল্লাহর বিশেষ দান। তিনিই দয়া ও একান্ত অনুগ্রহে এ খাবার আমাকে দান করেছেন।

আসলে এ ‘বিসমিল্লাহ’র মধ্যে এক মহান দর্শন রয়েছে। ‘বিসমিল্লাহ’ মূলত এ শিক্ষা দেয় যে, যে লোকমাটি মুহূর্তের মধ্যে তুমি গলধঃকরণ করলে, তা তোমার কাছে পৌঁছতে বিশ্বজগতের কত শক্তি ব্যয় হয়েছে। চিন্তা করে দেখ, এক টুকরা রুটি কীভাবে পৌঁছল তোমার হাতে? কৃষক বীজ বপন করার পূর্বে জমি চাষযোগ্য করার জন্য কিছুদিন বলদ দ্বারা হাল চাষ করেছে। এরপর বীজ বপন করেছে। এতটুকু ছিল কৃষকের কাজ। তারপর কোন সেই সত্তা, যিনি মাটির সেই ছোট বীজের মধ্যে এমন উৎপাদনযন্ত্র লাগিয়েছেন যে, তাতে অঙ্কুর ফুটে বের হয়? কে সেই সত্তা, যিনি শক্ত মাটির পরতের মধ্যে অঙ্কুরকে লালন করে এমন শক্তি দান করেন যে, তার কৃশ দেহের কোমল কিশলয় মাটির আবরণ ফুঁড়ে আত্মপ্রকাশ করে এবং শস্য-শ্যামল ফসলের রূপ লাভ করে? কে তাকে আন্দোলিত বাতাসের ক্রোড় জোগাড় করে দেন? তার উপর মেঘের সামিয়ানা টাঙিয়ে রোদের ঝলসানো থেকে রক্ষা করেন? কে সেই সত্তা, যিনি প্রয়োজন মাফিক চন্দ্র-সূর্যের কিরণ তার ওপর বিকিরণ করেন? প্রয়োজনে বারি বর্ষণ করে তার প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি করেন? অবশেষে এক একটি ক্ষেতে শত শত শীষ তৈরি করেন এবং এক একটি দানা থেকে শত শত দানা সৃষ্টি করেন, সে সেই সত্তা?

চিন্তা করে দেখ, তোমার কি ক্ষমতা আছে যে, এসব মাখলুকের শক্তি ব্যয় করে এক লোকমা খাবার তৈরি করে মুখে দেবে? আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ কি তোমার ক্ষমতায় রয়েছে? সূর্যের আলো কি তোমার ক্ষমতায় রয়েছে? দুর্বল অঙ্কুরকে মাটির ওপর উত্থিত করার ক্ষমতা কার? আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে এ বাস্তবতাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন-

افرايتم ما تحرثون - اأنتم تزرعونه ام نحن الزارعون

অর্থাৎ একটু চিন্তা করো, যে বীজ তোমরা জমিনে ফেলে আস, তা কি তোমরা উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্ন করি? (সূরা ওয়াকিয়া আয়াত নং-৬৩) তোমরা এর জন্য যতই অর্থ ব্যয় কর না কেন, যতই কৌশল কাজে লাগাও না কেন, এরপরেও এতসব কিছু তোমাদের সাধ্যের ভেতর ছিল না। সুতরাং একটু চিন্তা করে এ খাবার গ্রহণ কর, তাহলে এ খাবার গ্রহণও তোমার জন্য ইবাদতে গণ্য হবে। খাবারের এ লোকমাটি তোমার শক্তিতে লাভ করতে পারনি; বরং এটা মহান দাতার দান, যিনি এ খাদ্য তোমার কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বজগতের বিশাল ও বিপুল শক্তিকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন। তাই লোকমা গ্রহণকালে সেই মহান দাতাকে ভুলে যেও না।

মুসলমান এবং কাফেরের খাবারের মধ্যে পার্থক্য:

আমার হজরত ড. আবদুল হাই (রহ.) বলতেন, আসলে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের নামই হচ্ছে দ্বীন। দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু পরিবর্তন করে নিলেই দুনিয়াও দ্বীন হয়ে যাবে। যেমন খাবার আল্লাহর নেয়ামত একথা চিন্তা না করে এবং বিসমিল্লাহ না বলে খেয়ে ফেললে তোমার ও কাফেরের খাবার গ্রহণে কোনো পার্থক্য থাকল না। কারণ কাফেররাও খানা খায়, তোমরাও খাও। তারাও ক্ষুধা মেটায়, তোমরাও মেটাও। তারাও স্বাদ আস্বাদন করে, তোমরাও কর। এই যদি তোমার অবস্থা হয়, তাহলে তুমি শুধু পার্থিব প্রয়োজনে খাবার গ্রহণ করলে বিধায় তোমার খানার সঙ্গে দ্বীনের কোনো সম্পর্ক রইল না। কাফের ও তোমার খানার মাঝে কোনো ব্যবধান থাকল না। যেমন গরু, মহিষ, মেষ খাবার গ্রহণ করছে, তদ্রুপ তুমিও খাবার গ্রহণ করেছ তোমাদের দু’জনের খাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকল না।

অধিক খাবার গ্রহণ কোনো যোগ্যতার পরিচায়ক নয়:

এ বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ এর প্রতিষ্ঠাতা হজরত কাসেম নানুতবী (রহ.) এর একটি বিরাট রহস্যপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। তার যুগে আর্য সমাজের হিন্দু সম্প্রদায় ইসলামের বিরুদ্ধে বিরাট অপপ্রচার চালাচ্ছিল। হজরত নানুতুবী ওই আর্য সমাজের সঙ্গে মুনাযারা বা বিতর্ক অনুষ্ঠান করতেন, যেন মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যায়। একবার তিনি এক মুনাযারার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে আর্য সমাজের একজন পণ্ডিতের সঙ্গে মুনাযারা ছিল। মুনাযারার পূর্বে খানা-পিনার আয়োজন করা হলো। অভ্যাস অনুযায়ী হজরত নানুতুবী সামান্য কিছু খেয়ে উঠে গেলেন। অপরদিকে আর্য হিন্দু পণ্ডিত অতি ভোজনে অভ্যস্ত ছিল বিধায় খুব পেট ভরে খাবার খেল। খাওয়ার পর্ব শেষ হলে নিমন্ত্রণকারী বলল, মাওলানা! আপনি খুব সামান্য খাবার খেলেন। হজরত নানুতুবী উত্তর দিলেন, যতটুকু চাহিদা ছিল ততটুকু খেয়েছি। পণ্ডিততজী পাশ থেকে বলে উঠল, আপনি যেহেতু খাওয়ায় হেরে গেলেন, সুতরাং বিতর্কেও হেরে যাবেন। হজরত নানুতুবী উত্তর দিলেন, যদি খাওয়া প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমার সঙ্গে করার কী প্রয়োজন ছিল? কোনো গরু কিংবা মহিষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেই তো হত। গরু-মহিষের সঙ্গে খাওয়ার প্রতিযোগিতা হলে অবশ্যই আপনি হেরে যাবেন। আমি খাওয়ার প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে আসিনি, বরং আমি দলীল প্রমাণের মাধ্যমে তর্ক করতে এসেছি।

পশু ও মানুষের মাঝে পার্থক্য:

হজরত নানুতুবী (রহ.) এর উত্তরে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই দেখা যাবে, খাওয়া-দাওয়ার বেলায় মানুষ ও পশুতে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। পশুরাও খায়, মানুষও খায়। আর আল্লাহ তায়ালা সব প্রাণীকেই রিজিক দান করেন। এমনকি অনেক সময় মানুষের চেয়েও উন্নত রিজিক দান করেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, মানুষ খায় এবং আল্লাহকে ভুলে যায় না। পশু-পাখি এ কাজটি করতে পারে না। এটাই হলো, মানুষ ও পশুর মাঝে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য।

হজরত সুলায়মান (আ.) এর সৃষ্টিজগতকে দাওয়াত:

আল্লাহ তায়ালা হজরত সুলায়মান (আ.)-কে পুরো দুনিয়ার রাজত্ব দান করেছিলেন। একবার তিনি সব সৃষ্টি জীবকে এক বছর পর্যন্ত খাওয়ানোর জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, সুলায়মান! এটা তোমার দ্বারা সম্ভব হবে না। হজরত সুলায়মান (আ.) এক মাসের জন্য আবেদন জানালেন। জবাবে আল্লাহ তাআলা বললেন, এটাও তুমি পারবে না। অবশেষে এক দিনের মেহমানদারীর জন্য আবেদন করলেন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, এটাও তোমার সাধ্যে কুলাবে না। তবুও তোমার আবেদন রক্ষার্থে কবুল করে নিলাম।

অনুমতি পেয়ে হজরত সুলায়মান (আ.) খুব খুশি হলেন। অসংখ্য মানব ও জ্বীনকে খাবার প্রস্তুতের কাজে লাগিয়ে দিলেন। কয়েক মাস ব্যাপী প্রস্তুতি কর্ম চলল। তারপর সমুদ্রতীরে দস্তরখান বিছানো হলো। সেখানে খাবার পরিবেশন করা হলো। আর তিনি বাতাসকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন, খাবার যেন নষ্ট না হয় সে জন্য নদীর তীর দিয়ে প্রবাহিত হতে।

সব প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন হলো, তখন তিনি আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ! খানা প্রস্তুত হয়েছে। এখন আপনি আপনার সৃষ্টিজীবের একটি দল পাঠিয়ে দিন। আল্লাহ বললেন, আমি প্রথমে সমুদ্র থেকে একটি মাছ পাঠাচ্ছি। ফলে সমুদ্র থেকে একটি মাছ উঠে এল এবং হজরত সুলায়মান (আ.)-কে বললো, জানতে পারলাম, আজ নাকি আপনি দাওয়াত দিয়েছেন। হজরত সুলায়মান (আ.) বললেন, দস্তরখানায় যাও। সেখান থেকে খাও। মাছটি দস্তরখানের একপ্রান্ত থেকে খানা শুরু করল এবং অপর প্রান্তে পৌঁছা পর্যন্ত একাই সব খানা শেষ করে দিয়ে বলল, আরো চাই। হজরত সুলায়মান (আ.) উত্তর দিলেন, সব খানা তো তুমি একাই খেয়ে ফেলেছ, এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। মাছ বলল, মেজবানের পক্ষ থেকে এমন উত্তর দেয়া কি উচিত? আমি যেদিন সৃষ্টি হয়েছি, সেদিন থেকে আমার প্রতিপালক আমাকে পেট ভরে খাবার দিয়েছেন। আজ তোমার দাওয়াতে এসেছি, অথচ আমার ক্ষুধা মেটেনি। তোমার প্রস্তুতকৃত সব খাবারেরও দ্বিগুণ আমি প্রতিদিন খাই। আমার আল্লাহ আমাকে খাওয়ান। একথা শুনে হজরত সুলায়মান (আ.) সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। (নাফহাতুল আরব পৃষ্ঠা-১১০)

খাবারের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর:

সব সৃষ্টিজীবের রিজিকদাতা আল্লাত তায়ালা। সমুদ্রে গভীর তলদেশে বসবাসকারী প্রাণীকেও তিনি রিজিক দান করেন। কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে:

وما من دابة فى الارض الا على الله رزقها

‘পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালার নয়।’ (সূরা হুদ:৬)

সুতরাং প্রমাণিত হলো, রিজিক প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে কোনো বৈষম্য করেন না। যারা আল্লাহর দুশমন, তাদেরকেও তিনি রিজিক দান করেন। অথচ তারা আল্লাহকে মানে না; বরং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে হঠকারিতা প্রদর্শন করেন। এরপরেও আল্লাহ তাদেরকে রিজিক দান করেন। অতএব, খাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি? প্রকৃত পার্থক্য হলো, জীব-জন্তু ও কাফের-মুশরিকরা খাদ্য গ্রহণ করে ক্ষুধা নিবারনের উদ্দেশ্যে। তাই তারা খাওয়ার শুরুতে আল্লাহর নাম নেয় না। আর তোমরা তো মুসলমান। তোমরা একটু চিন্তা-ভাবনা করে আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার গ্রহণ কর। অতঃপর তাঁর শুকরিয়া আদায় করো। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলো। তাহলে এ খাবার গ্রহণও তোমাদের জন্য ইবাদত হয়ে যাবে।

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন কর:

আমার হজরত ডা. আবদুল হাই (রহ.) একটি কথা বলতেন। বছরের পর বছর আমি এর ওপর আমল করেছি। যেমন কোনো ব্যক্তি ঘরে গেল, খাবারের সময় হলো, দস্তরখানে গিয়ে বসে পড়ল এবং খাবার সামনে আনা হলো। ক্ষুধায় তার পেট চোঁ-চোঁ করছে, খাবারও খুব তৃপ্তিদায়ক হয়েছে। মন চায় খাবারের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে। কিন্তু সে তা করল না; এক মুহূর্ত বিলম্ব করল এবং ভাবল, এ খাবার আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। আল্লাহর বিশেষ দান। আমার শক্তিতে এটি আসেনি। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার সামনে এলে শোকর আদায় করতেন, তারপর খানা খেতেন। তাই আমিও তাঁর অনুসরণ করে আল্লাহর নাম নিয়ে খাব। এভাবে ভাবো, তারপর বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে দাও।

অনুরূপভাবে ঘরে ফেরার পর তুমি দেখলে, শিশুটি খেলছে। মন চাচ্ছে, তাকে কোলে তুলে নেবে, আদর করবে। কিন্তু তুমি ক্ষণিকের জন্য থেমে গেলে। ভাবলে, শুধু মন খুশির জন্য শিশুটিকে কোলে নেব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে স্নেহ করতেন, কোলে তুলে নিতেন। আমি তাঁর সুন্নতেরই অনুসরণে শিশুকে কোলে নেব। হজরত বলতেন, এই অনুশীলন আমি বছরের পর বছর ধরে করেছি। এরপর তিনি এই কবিতাটি শোনাতেন:

جكر بانى كيا هى مدتون غم كى كشا كش مين كوئى آسان هى كيا خوكر آزار هوجانا

‘যুগ-যুগ ধরে চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে কলিজা পানি করে ফেলেছি, চির অভ্যাসের বন্ধনমুক্ত হওয়া কি অত সহজ!

বছরের পর বছর অনুশীলন করে এ অভ্যাস গড়ে তুলেছি। এখন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখন থেকে যখনই কোনো নেয়ামত সামনে আসে, তখনই মনযোগ প্রথমে এ দিকে আকৃষ্ট হয় যে, এটা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। তারপর তাঁর শোকর আদায় করে কাজ সম্পন্ন করে ফেলি। আর একেই বলা হয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এর ফলে পার্থিব বিষয়ও দ্বীনের অংশে পরিণত হয়ে যায়।