ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গার রেলপথে ট্রেনের প্রথম হুইসেল

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে ট্রেনের প্রথম হুইসেল বেজেছে। এর মাধ্যমে পদ্মাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে লোকমোটিভসহ ৬টি কোচের পরীক্ষামূলক ট্রেন একটি লম্বা হুইসেল দিয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। আর এর মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা যুক্ত হলো রেলপথে। এতে উচ্ছ্বসিত ওই অঞ্চলের জনসাধারণ।

পরীক্ষামূলক যাত্রার প্রথম এই ট্রেনটি লোকোমাস্টার হিসেবে এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে এম এ হোসেন ট্রেন চালাচ্ছেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করছেন আনোয়ার হোসেন। পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। আরও উপস্থিত আছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়েল মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী তারিখ দিয়েছেন। এই রেললাইন উদ্বোধনের ফলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রা সহজ হবে।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু পুরো এই পথটি এখনও নির্মাণ না হওয়াতে আপাতত ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করতে চায় সরকার। আজকের এই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফল হওয়ার পর চলতি মাসে আরও কয়েকটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে নতুন এ রেলপথে। এরপর আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের আংশিক উদ্বোধন করবেন। তারপরের সপ্তাহ থেকে এই পথে চালানো হবে যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক ট্রেন।

dhakapost

পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের খবরেই উচ্ছ্বসিত জনসাধারণ

এই পথে ট্রেন চলাচলের খবরে মাওয়া-ভাঙ্গা এলাকাবাসীদের মনে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে। তাদের অনেকে বলছেন, এবার বুঝি ট্রেনে চড়ার সাধ মিটবে।

কখনও ট্রেনে চড়েননি শিবচরের বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকার ওপর দিয়ে কখনও ট্রেন চলবে সেটা ভাবিনি। ট্রেন চলাচলের খবর শুনে আমি অনেক খুশি। কখনও ট্রেনে চড়িনি, এবার বুঝি সাধ পূরণ হবে। আগে শিবচর থেকে ঢাকা যেতে সময় মানতে হতো ফেরি ঘাটের। এরপর গত বছর চালু হলো পদ্মা সেতু। চালু হওয়ার পর এখন রাত-দিন যেকোন সময় ঢাকায় যাওয়া-আসা করা যায়। তবুও ঢাকায় ঢুকতে জ্যামে পরতে হয়। এখন যদি ট্রেন চালু হয় তাহলে ঢাকায় যেতে আর জ্যামের চিন্তা করতে হবে না। এই ট্রেন যোগাযোগ আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছে।

ফরিদপুরের নগরকান্দার বাসিন্দা আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেন চলাচলের খবরে আমাদের ভালো লাগছে। এখন আমাদের এখানে নতুন রেলপথ হয়েছে, নতুন ট্রেন দিচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলবে এটা ভাবতেই আমাদের ভালো লাগছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বাসে এখন আমাদের ঢাকায় যেতে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আগে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো শুধু ফেরি পার হতে এবং ঢাকায় যেতে লাগতো প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

তিনি বলেন, ভাঙ্গা থেকে ঢাকায় যেতে লোকাল বাসগুলো প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া নেয়। ক্ষেত্র বিশেষে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। ঈদের সময় প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা ভাড়া নেয়। এখন ট্রেন চলাচল শুরু হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়া থাকবে। অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার কোনো জটিলতা থাকবে না। আমি মনে করব বাস থেকে ট্রেনের জার্নি সবচেয়ে আরামদায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, ট্রেন চলাচল চালু হওয়াতে আরও সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে শিশু ও মহিলাদের জন্য। অনেক সময় ওয়াশরুমে যাওয়ার একটা প্রেসার থাকে সেটা পুরুষ মানুষ কোনভাবে সামলে নিতে পারে। কিন্তু নারীদের জন্য আরও বেগতিক হয়। এই সমস্যাটা এখন সমাধান হবে। সর্বোপরি আমাদের এলাকার মানুষদের জন্য এটা একটা আশীর্বাদ। কারণ আমাদের এলাকার মানুষজন আগে কখনো ট্রেনে ওঠেনি।

গত বছর পদ্মা সেতু যখন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়, তখন থেকে রেলওয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেয় মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজে। এরপরও পুরো ঢাকা-যশোর অংশের কাজ শেষ করতে না পারায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কর্তৃপক্ষ। পরে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

dhakapost

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, শুরুতে ৩টি স্টেশনের (মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর) সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। এর বাইরে নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পরে। শুরুতে একটি ট্রেন নিয়মিত পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত আসে। এ ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যে প্রধান প্রধান স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে। ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পাঠানো হয়েছে। তবে মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

স্বল্পমেয়াদি ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন ৭ জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে ৫ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এ প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)।

dhakapost

একইসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মূল রেলপথের বাইরে ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১০০ আধুনিক যাত্রীবাহী বগিও কেনা হয়েছে। এগুলো দিয়ে রেক সাজিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ঢাকা-যশোর রুটে ট্রেন চালানোর টার্গেট রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে তৈরি নতুন ব্রডগেজ রেলপথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে। এ পথে থাকবে না কোনো রেলক্রসিং। কারণ, যেখানেই রেললাইন ও সড়ক মিলেছে, সেখানেই পাতালপথ তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ৬টি আগে থেকেই রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি যখন ২০১৬ সালে অনুমোদন করা হয়, তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এই রেলপথ জিটুজির (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছে সিআরইসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।