ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১ ১৪৩১

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায়

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২৪  

ধবধবে একটি সাদা ব্যান্ডেজের ওপর লেখা, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। এমন একটি ছবি হাতে নিয়ে বুক চাপরে বিলাপ করছেন নিহত ফয়সালের বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম। তাঁর আত্মচিৎকারের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পাশে বসে কাঁদছেন ফয়সালের বাবাসহ তার ছয় বোন ও আত্মীয় স্বজন। তাঁর শোকে কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বলছেন, ‘‘আমার ছেলের জীবনডারে কেউ ভিক্ষা দাও, আহারে আমার নিমাইরে এমনভাবে গুলি করছে যে মাথা মগজও উড়ে গেছে’’। কোন পাষান্ড আমার ছেলেরে এমনে গুলি করল, তার কি একটু হাত কাঁপলো না’’। তিনি আরও বলেন, ‘‘পোলারে কত জায়গায় খুঁজছি, কেউ বলতে পারেনি কই আছে, থানায় গিছি, এই হাসপাতালে, ওই হাসপাতালে ঘুরছি, কোথাও পাইনি, ১৩দিন পর জানছি, আমার ছেলেরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করছে, আমার মানিক চানরে কই দাফন করছে তাও কেউ জানেনা। ‘কবরে দাঁড়াইয়া যে ফয়সাল বইল্ল্যা ডাক দেমু তাও পারমু না’, আহা’রে ফয়সালরে তুই গিয়া শুইয়্যা আছত’, আমার বুকে আয় বাবা।      
শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টায় ফয়সালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এমন আহাজারীর চিত্র।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ফয়সাল সরকার। ঘটনাটি ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যার। পরে ২২ জুলাই থেকে ২৫ জুলাইয়ের কোন এক সময় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ফয়সালকে ঢাকায় গণকবর দেওয়া হয়। পরে ১ আগস্ট পরিবারের লোকজন জানতে পারেন ফয়সালকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। 
নিহত ফয়সাল সরকার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের সরকার বাড়ির মো.সফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। সে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ইতোমধ্যে আট বিষয়ে পরীক্ষা শেষ করেছেন। পাশাপাশি সংসারের অভাব ঘুচাতে শ্যামলী পরিবহণের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।  
নিহত ফয়সালের ছোট ভাই ফাহাদ সরকার বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকালে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর ভাইয়ের নম্বরের ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাই। এরপর আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করি। বাহিরে তখনও গোলাগুলি চলছিল। কোথাও খোঁজ না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণ খান থানায় জিডি করি। গত ১২দিন ঢাকার এই হাসপাতালে ওই হাসপাতালে খোঁজাখুজি করেছি, কোথাও হদিস পাইনি। পরে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকালে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিলে তাঁরা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহগুলোর ছবি দেখালে সেখানে ফয়সাল ভাইয়ের মরদেহের ছবি দেখতে পাই। কোথায় দাফন করা হয়েছে জানতে চাইলে তাঁরা জানায়, ১৫/২০টি লাশ একবারে গণকবর দেয়া হয়েছে, কাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তাঁরা তা জানেন না।
ফয়সালের বড় বোন রোজিনা আক্তার ও নুরুননাহার আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের ছয় বোনের পর এই ভাই, আপনারা আমার ভাইকে এনে দেন, আমরা কোন রাজনীতি করি না, আমাদের সংসার এখন কে চালাবে, আমাদের কি হবে। এই ভাই রোজগার করে বোনদের বিয়ে দিয়েছে। আমার বাবা কানে শুনে না।    
নিহত ফয়সালের বাবা বৃদ্ধ মো. সফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, আমার ছয় মেয়ের পর ফয়সাল হইছে। এই ফয়সাল লেখাপড়ার পাশাপাশি শ্যামলী বাসে পার্টটাইম সুপাইভাইজারের কাজ করে সংসার চালাত। এখন আমার পুরো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। কারা আমার ছেলেকে হত্যা করল ?ি ক দোষ ছিল আমার ছেলের, সে তো কোন রাজনীতি করত না, পেটের দায়ে বাসে কাজ করত তাকে কেন গুলি করে মারা হলো ? এই বিচার আমি কার কাছে দেব?  
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ১৩দিন পর ফয়সালের মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরেছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এর আগেও ঢাকায় নিহত কয়েকজনের বাড়িতে আমি গিয়েছি, সহযোগিতা করেছি। ফয়সালের পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করা হবে, সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।