ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩১ ১৪৩১

  • || ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

নতুন বউকে ঘরে তোলার আগেই গুলিতে মারা গেলো কুমিল্লার আল আমিন

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২৪  

১৯ জুলাই (শুক্রবার) ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনি এলাকার বাসা থেকে জুমার নামাজ পড়তে বের হন আল আমিন (২৩)। নামাজ শেষে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু আল আমিনের আর বাসায় ফেরা হয়নি। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তার পিঠে বুলেট ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
নিহত আল আমিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সাভারের রেডিও কলোনি এলাকার ভাড়া বাসায়। চাকরি করতেন একই এলাকার একটি ফ্যাক্টরিতে। মারা যাওয়ার পরদিন শনিবার তার মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এদিনই জানাজা শেষে দৌলতপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় নানার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
আল আমিনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার পরিবারে। স্বজনদের কান্নায় চোখ ভারি হয়ে আসে পাড়া-প্রতিবেশীদেরও।

সরেজমিনে আল আমিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাতুর পরিবেশের চিত্র। দাফনের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তার বাবা-মা। ছেলের নানা স্মৃতি মনে করে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তারা। তাদের কান্না দেখে সান্ত¦না দিতে আসা প্রতিবেশীদের চোখও ছলছল করে ওঠে এমন বুকফাটা আর্তনাদে।নতুন বউকে ঘরে তোলার আগেই  গুলিতে মারা গেলো কুমিল্লার আল আমিন
আল আমিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ওইদিন জুম্মার নামাজ পড়ে ছেলেটার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। আমি বলেছিলাম চারিদকে অরাজকতা, সাবধানে যাইস বাবা। তার সাথে দুই বন্ধুও ছিলো। নামাজের পর গোলাগুলি হয়- এর মধ্যেই তার শরীরে গুলি লাগে, রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর আমার পাখিটা আর উঠতে পারেনাই। পিঠে দিয়ে ঢুকে বুলেট পেটে দিয়ে বের হয়। রাস্তায় নাকি কেউ ভয়ে তার লাশ ধরেনি অনেক্ষণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর তার এক বন্ধু মোবাইলে কল দিয়ে বলে, আল আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে একজন বলছিতেছিল, খালাম্মা আল আমিন মারা গেছে। এসময় চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার কলিজার টুকরা পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫ মাস আগে ছেলেটা বিয়ে করেছে। বউটাকে ঘরে তুলে আনতে পারেনাই। এর আগেই আমার ছেলেটাকে খুন করে দিল তারা। ঘরের পাখিকে ২৩ বছর না খেয়ে, না পরে বাঁচিয়ে রেখেছি। টাকা পয়সার জন্য তারে বেশি পড়াশোনাও করাতে পারিনি। পরে কাজ করতে যায়। ইচ্ছে ছিল সংসারের ঋণগুলো শেষ করে আবার পড়াশোনা করবে। ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরবে। আর কিছুই হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।’
আল আমিনের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, ‘ঘটনার পর আমাকে কেউ একজন কল দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করিনি। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। শনিবার তার লাশ নিয়ে বাড়ি আসলাম।’
এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতি করে না। এইচ এসসি পরীক্ষা দিয়ে আর পড়াশোনা করেনি। চাকরিতে যোগ দিছিল, পরে আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরিকল্পনা করছিল। তার কি অন্যায় ছিল? সে নামাজে গেছে। কোন দোষে তাকে গুলি মারা হলো? এই প্রশ্নের আমি কোনো উত্তর পাই না।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বলেন, ঢাকায় সংঘর্ষে বরুড়ার তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনের পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর নিহতদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছি। তাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আল আমিনের পরিবারেরও যদি সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাদেরকেও সহযোগিতা করা হবে।