ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক ফিরিয়ে দিল নিরুদ্দেশ রাজীবকে

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৮  

আড়াই বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ছেলের চিন্তায় একদিনও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি মা রাবেয়া খাতুন।

মানসিকভাবে অসুস্থ ১৭ বছর বয়সী ছেলের সন্ধান পেতে নিজ জেলা রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। থানায় জিডিও করেছিলেন। কিন্তু ছেলের সন্ধান পাননি। অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে হারিয়ে যাওয়া বুকের সেই ধনকে খুঁজে পেলেন বগুড়ায়।

রাজীব শুভ নামের সেই কিশোর এখন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার দুপুরে শজিমেক হাসপাতালে অনেক দিন পর ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন রাবেয়া খাতুন। মুখে-কপালে বারবার চুমু খেতে খেতে বলেন, ‘বাবা রে, তুই এত দিন কই ছিলি রে? তোরে কোথায় না কোথায় খুঁজেছি রে।’ পাশে থাকা রাজীবের বোনও তখন অঝোরে কাঁদছিলেন। ততক্ষণে অন্যান্য রোগীর স্বজনদের চোখও ভিজে উঠেছে। কিন্তু রাজীব শুভ যেন ভাবলেশহীন। মা, বোন এবং সঙ্গে আসা এক মামাকে চিনলেও কোনো কথা বলছিল না সে।

বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় ভাইপাগলা মাজারের পশ্চিমের ফুটপাতের ধারে কয়েক দিন ধরে এক যুবক অচেতন হয়ে পড়ে ছিল। খালি গা, লুঙ্গি পরা যুবকটির মাথার চুল যেমন বড় হয়েছিল, মুখটাও দাড়ি-গোঁফে ঢাকা। তার ডান পায়ের গোড়ালিতে পচন ধরেছে। সেখানে মাছি আর পোকা যেন বাসা বেঁধেছে।

গত রোববার বিকেলে সাহেব আলী নামের এক ইলেকট্রিশিয়ান তাকে দেখে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠন’-এর প্রধান সোহেল রানাকে খবর দেন। সোহেল ওই এলাকায় তাদের সংগঠনের সদস্য শাহনাজ ইসলাম নাজকে সড়কের পাশে এক যুবকের পড়ে থাকার কথা জানিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির জন্য অনুরোধ করেন। পরে শাহনাজ ইসলাম নাজ তাদের সংগঠনের অন্য সদস্যদের নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই যুবককে উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার মাথা কামিয়ে ও দাড়ি-গোঁফ কেটে গোসল করানো হয়। তবে যুবকটি তখন পর্যন্ত তার নাম-ঠিকানা বলতে পারছিল না। সংগঠনের সদস্যরা তখন তার একাধিক ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেন। পরদিন সোমবার রাত ১০টার দিকে যুবকটি নিজের নাম রাজীব শুভ, বাবার নাম ইমাজ উদ্দিন বলে জানায়। বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার অনুপামপুর গ্রামে। এর বেশি কিছু সে বলতে পারেনি।

সঙ্গে সঙ্গে নাম-পরিচয়সহ তার ছবি আবারও ফেসবুকে শেয়ার করে স্বজনদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়। এর পাশাপাশি বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজশাহী ও চারঘাটে অবস্থানরত তাদের সদস্যদেরও বিষয়টি অবহিত করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে চারঘাট থেকে রাজীব শুভ’র মামা রফিকুল ইসলাম হারিয়ে যাওয়া ভাগ্নের ছবি ফেসবুকে দেখে তাকে চিনতে পেরে বগুড়ায় অনলাইন রক্তদান সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তিনি তার বোন এবং ভাগ্নিকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

রাজীবের মা রাবেয়া খাতুন জানান, তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে রাজীব মেজ। শিশুকালেই তার মানসিক রোগ ধরা পড়ে। কয়েক বছর আগে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর প্রায় তিন বছর আগে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। তখন চিকিৎসকরা রাজীব শুভকে কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনমজুর বাবা ইমাজ উদ্দিন অর্থাভাবে এক সময় ওষুধ কেনা বন্ধ করে দেন। ফলে রাজীব শুভ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ২০১৬ সালের মাঝামাঝি একদিন হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে চারঘাট থানায় একটি জিডিও করা হয়।

রাবেয়া খাতুন বলেন, ছেলেকে হারানোর পর একদিনও ঘুমাতে পারিনি। চিন্তা হতো- সে কোথায় আছে, কী করছে। তবে বিশ্বাস ছিল সে বেঁচে আছে এবং একদিন তাকে ফিরে পাব। ছেলের চিকিৎসা ও সন্ধান দেওয়ার জন্য তিনি বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠনের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠনের প্রধান সোহেল রানা জানান, তারা জরুরি প্রয়োজনে বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।

সংঠনের সদস্য শাহনাজ ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর পরই আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমি মনে করি সে তো আমার ভাইও হতে পারতো। রাজীব শুভকে তার স্বজনরা খুঁজে পাওয়ায় সংগঠনের সদস্যরা দারুণ খুশি।

শজিমেক হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম জানান, রাজীব শুভর পায়ের গোড়ালি কেটে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন ক্ষত অনেকটাই ভালো হয়েছে। তবে তাকে আরও কয়েকদিন ড্রেসিং করাতে হবে।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, রাজীবকে আমরা যথাযথ চিকিৎসা দিচ্ছি। সে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে।