যৌন হয়রানির যত অভিযোগ এই নামী দামিদের বিরুদ্ধে

‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন প্রথম শুরু হয় হলিউড প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। এরপর বিনোদন জগতে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। হলিউডের পাশাপাশি এই আন্দোলনের আঁচ লাগে বলিউডেও।

এরপর থেকে বলিউডে যৌন হয়রানির ঘটনার শিকার নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তুলে ধরেন নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত গল্প। সে সঙ্গে অভিযুক্তদের নাম। ফলে এসব নাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইন্টারনেট দুনিয়ায়।

তবে যাদের নামে উঠেছে এসব অভিযোগ, তাদের অনেকেই এই পাড়ায় নামীদামি ও পরিচিত মুখ। আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জানাবো এমনই কিছু সাধু অভিযুক্তদের নাম, যারা বিভিন্ন সময়ে শুটিং স্পটে বা বাসায় নায়িকাদের ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন।

চলুন দেখা যাক কারা তারা?

আনু মালিক বলিউড সংগীত পরিচালক আনু মালিককে ‘পেডোফাইল’ (শিশু নির্যাতনকারী) বলে মন্তব্য করেন সংগীতশিল্পী শ্বেতা পন্ডিত। তার একটি বড় কারণও আছে, ২০০১ সালের দিকে ১৫ বছর বয়সী শ্বেতাকে আনু মালিক তার স্টুডিওতে ডেকে নিয়ে জোর করে চুমু খান। এমন অভিযোগ প্রকশ্যে আসতেই চলতি বছর ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর বিচারক প্যানেল থেকে বহিষ্কৃত হন আনু।

কৈলাস খের কৈলাসের কেলেঙ্কারির কথা হয়ত অনেকেই শুনেছেন আবার অনেকের জন্য নতুন। তার এই কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ করেছেন ভারতের এক নারী আলোকচিত্রী। ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি তুলে ধরেছেন সে কীর্তির কথা। একবার ওই নারী আরেক নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কৈলাসের সাক্ষাৎকার নিতে তার বাড়িতে যান। সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে নাকি কৈলাস দু’জনের মাঝখানে এসে বসেন এবং উরুতে বাজেভাবে হাত বোলাতে থাকেন।

বিকাশ বহেল ভারতের নামীদামি পরিচালকদের একজন। নাম বিকাশ। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। বিকাশ নাকি কঙ্গনাকে দেখলে প্রায়ই অশালীন ইংগিত করতেন। এমনকি অশ্লীলভাবে জড়িয়ে ধরতেন, চুলের গন্ধ শুকতেন। এমন অভিযোগের কারণেই আরেক পরিচালকের অনুরাগ ক্যাশপকে নিয়ে গড়া বিকাশের প্রযোজনা সংস্থা ‘ফ্যান্টম ফিল্মস’ও ভেঙে যায়।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। তিনি কলকাতার একটি পানশালায় এক বিমানবালাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর চলমান ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ সামনে আনেন ওই বিমানবালা। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে কলকাতার এক পানশালায় তাকে জোর করে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন অভিজিৎ এবং কানের মধ্যে বাজেভাবে স্পর্শ করতে থাকেন। এমন অভিযোগ অবশ্য ধুলোয় উড়িয়ে দেন শিল্পী।

সুভাষ ঘাই বলিউড পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন মডেল কেট শর্মা। তার অভিযোগ ছিল, একবার জোর করে জড়িয়ে ধরে তাঁকে চুমু খেয়েছিলেন সুভাষ ঘাই। এমন অভিযোগ এনে সুভাষের নামে একটি মামলাও করেন কেট।

রঘু দীক্ষিত সংগীত পরিচালক রঘু দীক্ষিত। তিনি গানের রেকর্ডিংয়ের সময় সংগীতশিল্পী চিন্ময়ী শ্রীপদকে নাকি জোর করে চুমু খেয়েছিলেন। এছাড়াও স্টুডিওতে কথাবার্তা চলার এক পর্যায়ে নাকি রঘু চিন্ময়ীকে তার কোলে বসতে বলেছিলেন। চিন্ময়ীর এমন অভিযোগে ক্ষমাও চান রঘু।

রজত কাপুর বলিউড অভিনেতা ও পরিচালক রজত কাপুরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন বেশ কয়েকজন নারী ও সাংবাদিক। তাদের এক নারীকে নাকি রজত ফাঁকা ঘরে ডেকেছিলেন। অবশ্য অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষমা চান রজত। এছাড়াও অভিনেতা অর্জুন সরাজ, পিজুশ মিশ্র, এম মুকেশ, পরিচালক দিবাকর ব্যানার্জি, বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রযোজক গৌরাঙ্গ দশি, চিত্রনাট্যকার মুশ্তাক শেখ গীতিকবি বৈরামথু, সংগীত পরিচালক তোশি সাবরিসহ অনেকের নাম উঠে আসে অভিযুক্তদের তালিকায়।

নানা পাটেকার নানা পাটেকার। জনপ্রিয় এই অভিনেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনার পর বলিউডে একের পর এক মি-টু আন্দোলনে যুক্ত হন সেখানকার নারীরা। নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। ২০০৮ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির শুটিংয়ের সময় তিনি নাকি তনুশ্রীর শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করেন। এমন অভিযোগ সামনে আসার পর শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। দু’ভাগে বিভক্ত হয় বলিউড। কেউ নানার পক্ষে, আবার কেউ তনুশ্রীর পক্ষ নিয়ে নানার উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেন। তবে ঘটনা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়।

সাজিদ খান পরিচালক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী মান্দানা করিমি। ২০১৪ সালে এই অভিনেত্রীকে নাকি সাজিদ খান তার অফিসে ডেকে নগ্ন হতে বলেছিলেন। মান্দানার অভিযোগের পর মডেল র্যাকচেল হোয়াইট ও এক নারী সাংবাদিকও সাজিদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। এমন অভিযোগের কারণে সাজিদকে ‘হাউজফুল ৪’ ছবি থেকে বাদও দেয়া হয়।

সুশান্ত সিং রাজপুত বলিউড অভিনেতা সুশান্তর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন অভিনেত্রী সাঞ্জানা সাঙ্গি। তার অভিযোগ, ‘কিজি অউর ম্যায়’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করার সময় নাকি সুশান্ত তাকে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ও বার্তা পাঠাতেন। এমন অভিযোগে অশান্ত হয়ে পড়েন সুশান্ত। জবাবে তিনি জানান, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভেই নাকি এমন অভিযোগ করেছেন সাঞ্জানা।

অলক নাথ অভিনেতা অলক নাথ। বিনোদন ভূবনে বেশ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু তার ইমেজকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয় বেশ কয়েকটি যৌন হয়রানির অভিযোগ। ছোট পর্দার অভিনেত্রী বিনতা নন্দা ও সন্ধ্যা মৃদুল ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’তে জানান, অলক নাথ মদ্যপান করে তাদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেন।