ব্রেকিং:
‘শুধু অভ্যুত্থান নয়, আমরা রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি’ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন দেশের দায়িত্ব নিলেন সেনাপ্রধান জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ কুমিল্লায় কেউ মারা যায় নি, গুলিবিদ্ধ ৮ জন আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের দুই পাশে আ.লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেবিদ্বারে স্বজনদের আহাজারি থামছে না ‘গুলিতে মাথার মগজ উড়ে যায় শোক মিছিল স্থগিত করলো আওয়ামী লীগ মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষকদের উদাসিনতায় প্রাথমিকে কমছে শিক্ষার্থী

কুমিল্লার ধ্বনি

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৪  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় কিন্ডার গার্টেন, নুরাানী মাদরাসাসহ অন্যান্য স্কুল বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। অভিভাবকরা ও তাদের কোমলমতি ছেলে মেয়েদেরকে ওই সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির দিকেই বেশি  ঝুঁকছেন। 

গত ১ বছরে উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩৬ জন শিক্ষার্থী কমেছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদাসিনতার ফলে ওইসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন দাবি অভিভাবকদের।

এদিকে শিক্ষকরা বলেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মান সম্মত শিক্ষক, শিক্ষা উপকরসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় এ জন্য তারা অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন। তবে  যত্রতত্র কিন্ডার গার্টেন, নুরানী মাদরাসাসহ বিভিন্ন এনজিও স্কুল গড়ে উঠলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। ওইসব স্কুল থেকে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৫২টি। সেই সঙ্গে শহরসহ গ্রামের আনাচে কানাচে প্রায় শতাধিক কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও অসংখ্য নুরানী মাদরাসা অন্যান্য স্কুল গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৫৩০৫ জন। গত বছর ছিল ১৫৭৪১ জন। এ বছর কমেছে ৪৩৬ জন।

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া গড়ে উঠা ওইসব কিন্ডার গার্টেনসহ অন্যান্য স্কুলে নেই কোনো নিজস্ব জায়গা বা ভবন। নেই খেলার মাঠ, পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক। ওই সব কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো ব্যবসা ভিত্তিক ও ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রী স্বল্প শিক্ষিত প্রশিক্ষণবিহীন এলাকার বেকার যুবক-যুবতি দিয়ে চালানো হচ্ছে স্কুলগুলো। তবে এলাকা ভিত্তিক হওয়ায় ছাত্র ছাত্রী সংগ্রহে তাদের রয়েছে বাড়তি সুবিধা।

এদিকে উপজেলার তুলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়াল গাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,তারাগন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে শির্ক্ষাথীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে।

উপজেলার জাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হলো গত কয়েক বছর আগের করোনার প্রভাব। ওই সময় সরকার যখন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছিল, তখন ধারাবাহিকভাবে নুরানী মাদরাসাগুলোতে পাঠদান চলছে। অতি গোপনে অনেক কিন্ডার গার্টেনে পাঠদান করিয়েছে। নুরানী মাদরাসায় আরবির পাশাপাশি বাংলা ইংরেজি, অংশসহ অন্যান্য বিষয় পাঠ দান করায় অনেক অভিভাবক উৎসাহিত হয়ে তখন ছেলে-মেয়েদের নুরানী মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছেন।

পৌর শহরের তারাগন এলাকার  শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. হাসেন মিয়া বলেন, নিজ এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল গড়ে উঠেছে। ওই কিন্ডার গার্টেনে  নিজের লোকজন শিক্ষতকার সুযোগ পাওয়ায় তারা দায়িত্ব নিয়ে ছেলে ও মেয়েকে তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এখানে ভালো পড়া হচ্ছে বলে জানায়।

কলেজপাড়া এলাকার অভিভাবক মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমার পছন্দের স্কুল হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার পরিবেশ খুবই ভালো রয়েছে। 

তিনি বলেন, যখন ছেলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তির সময় হয়েছে তখন সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ। এ অবস্থায় অনেকটাই হতাশা হয়ে পড়ি। কিন্তু নুরানী মাদরাসায় পাঠদান চালু থাকায় ছেলেকে সেখানে ভর্তি করি। এখন দেখছি সেখানে ভর্তি করিয়ে ভালোই হয়েছে। এক দিকে আররি শেখা হচ্ছে। অন্য দিকে বাংলা ইংরেজি গণিতসহ অন্যান্য বিষয় ও পড়ছেন।

রাধানগর এলাকার গৃহিণী মোছা. আকলিমা আক্তার বলেন, অক্ষর জ্ঞান ভালো করে শিখতে ও জানতে মূলত কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্ডার গার্টেনে সীমিত শিক্ষার্থী থাকায় কোচিংয়ের ন্যায় পড়াশুনা হয় তাই মূলত ভর্তি করা।

উপজেলার জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. আনার কলি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মান সম্মত শিক্ষক, ভালো পরিবেশ,বিনামূল্যে বইসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা আছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। 

তিনি আরো বলেন, পাড়া মহল্লায় দিন দিন নুরানী মাদরাসা আর কিন্ডার গার্টেনসহ অন্যান্য স্কুল গড়ে উঠলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো প্রভাব পড়েনি।  এলাকার কিছু অভিভাবক রয়েছে তারা তাদের সন্তানকে স্কুলে পড়াশুনা করাতে রাজি নয়। এ ক্ষেতে অনেকে নুরানী মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছেন।

আখাউড়া উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন অভিভাবকরা অনেকটাই সচেতন হচ্ছেন। এখন অনেকেই নুরানী মাদরাসা ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি না করিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদেরকে ভর্তি করাচ্ছেন। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান ও  শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে একাধিক সভা করেছি।