হেভিওয়েট যারা বাতিল

একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে সময়ের কয়েকজন আলোচিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে কমিশন।

জানা গেছে, ঋণখেলাপি, হলফনামায় ভুল তথ্য, দুর্নীতি মামলায় দণ্ড, বিলখেলাপি, ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে গরমিল, মামলায় দণ্ড, তথ্যে অসঙ্গতিসহ বিভিন্ন কারণে এসব নামিদামি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

এদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রয়েছেন সময়ের আলোচিত বেশ কয়েকজন রাজনীতিক।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত করাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র তিনটি আসন থেকে বাতিল হয়েছে। আসনগুলো হলো, ফেনী-১ , বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন।

পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি উপজেলা) আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

ঋণ খেলাপি হওয়ায় টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতালীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রার্থী হয়েছেন কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকীও।

ঢাকা-৯ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের মনোনয়ন বাতিল করেছে ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। রোববার দুপুরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ঋণখেলাপির অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। সে সময় মির্জা আব্বাস এ সংক্রান্ত আদালতের আদেশের কাগজপত্র জমা দেন। তখন তাদের দুই ঘণ্টা সময় দেয়া হয়।

ক্রেডিট কার্ডের বিল না দেয়ায় হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার। রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।

দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের দুই মামলায় সাজা হওয়ায় নাটোর-২ আসনে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বিএনপির রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর।

কুড়িগ্রাম-৪ আসন (রাজিবপুর,রৌমারী ও চিলমারী উপজেলা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিউল ইসলাম চৌধুরী বাতিলের কথা জানান। রনি পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

ঋণখেলাপি হওয়ায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তিনি বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ভুয়া ভোটারদের তালিকা জমা দেয়ায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার আশরাফ হোসেন তার মনোনয়ন বাতিল করেন।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী মেজর অবসরপ্রাপ্ত আকতারুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

ঋণখেলাপী হওয়ায় চট্টগ্রাম-২ আসনে যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাকেও ঋণখেলাপের কারণে নির্বাচনে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও শাহাদাত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

তথ্য গোপনের অভিযোগে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

ঢাকা-১ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে থাকায় বিএনপি নেতা আবু আশফাকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ফাহিমা হোসেন জুবিলীর মনোনয়নপত্রে বিএনপি মহাসচিবের স্বাক্ষর না মেলার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-১ আসনে বিএনপির ২ প্রার্থীই বাতিল।

ঢাকা-২ আসনে দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপির প্রার্থী আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

এই আসনে ১৫ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। ঋণ খেলাপিসহ মনোনয়নপত্র দাখিলে ত্রুটি থাকায় ঢাকা ৪ আসনে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া ৬ জন হলেন, খেলাফত আন্দোলনের আবদুল মালেক, বিকল্পধারার কবির হোসেন, নজরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, আওলাদ হোসেন ও মনির হোসেন।

ঢাকা-৫ আসনে ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী সেলিম ভূঁইয়ার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।

ঢাকা-৭ আসনে নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী, বিএনপির নাসিমা আক্তার কল্পনা সোনালী ব্যাংকে ঋণখেলাপি হওয়ায় প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। দলীয় প্রত্যয়নপত্র না থাকায় আওয়ামী লীগের নাজমুল হকের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা-১৯ আসনে মোট ১২ প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থিতা গৃহীত ১০ জনের, করখেলাপির অভিযোগে বিএনপির কফিলউদ্দিনসহ মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ২ জনের।

ঢাকা ১০ আসনে ঋণখেলাপের অভিযোগে গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা-২০ আসনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের গৃহীত কপি না থাকায় বিএনপির মো. তমিজউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণ খেলাপি ও আয়কর না দেয়ার দায়ে বিএনপির সুলতানা আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

ঢাকা-১৭ আসনে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন। জানা গেছে, ঋণখেলাপীর অভিযোগে নাজমুল হুদার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

সিলেটে মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপির প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। সিলেট-৫ ও ৬ আসনে ভোটে দাঁড়াতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর হলফনামায় তার সই ছিল না।

নেত্রকোণা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রোববার দুপুরে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মঈনউল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।

যশোর-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহীন চাকলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল মনোনয়নপত্র বাছাইকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।

হবিগঞ্জ-১ আসনে এমপি প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

সেক্রেটারি শাহীন চাকলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রোববার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে এ ঘোষণা দেন।

হবিগঞ্জ-১ আসনে সংরক্ষিত নারী এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

এদিকে, মানিকগঞ্জে দলের সাতজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপির ওই সাত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ওই মনোনয়নপত্রগুলো গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে মির্জা ফখরুল লিখেছেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মানিকগঞ্জ জেলার প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা আমার সুপরিচিত এবং আমি নিজে তাদের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছি, এ বিষয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

জানা গেছে, আগামী ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১০ ডিসেম্বর।